গ্যাস ওয়েল্ডিং সরঞ্জাম এর নাম - Gas Welding Equipment - গ্যাস ওয়েল্ডিং

 গ্যাস ওয়েল্ডিং সরঞ্জাম এর নাম - Gas Welding Equipment - গ্যাস ওয়েল্ডিং
গ্যাস ওয়েল্ডিং সরঞ্জাম এর নাম - Gas Welding Equipment - গ্যাস ওয়েল্ডিং

গ্যাস ওয়েল্ডিং সরঞ্জাম এর নাম - Gas Welding Equipment - গ্যাস ওয়েল্ডিং

গ্যাস ওয়েন্ডিং সরঞ্জাম Gas Welding Equipment

গ্যাস ওয়েন্ডিং এর সূত্রপাত প্রায় ১০০ বছর পূর্বে শুরু হয়েছে। ১৮৯৫ খ্রিঃ হেনরী লুইস লি ক্যাটেলিয়ার নামের একজন ফরাসী রসায়নবিদ সর্বপ্রথম গ্যাস ওয়েন্ডিং প্রথা শুরু করেন। আধুনিক শিল্প উৎপাদন ক্ষেত্রে গ্যাস ওয়েন্ডিং এর ব্যবহার বহুমুখী। ছোট-বড়, হালকা ভারী সব শিল্পে গ্যাস ওয়েল্ডিং অপরিহার্য। যে সমস্ত পাতলা শীট আর্ক ওয়েল্ডিং এর প্রচন্ড তাপে গলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে সমস্ত জায়গায় গ্যাস ওয়েল্ডিং ব্যবহার করে জোড়া দেয়া হয়। আজকাল শিল্পের প্রয়োজনে গ্যাস ওয়েন্ডিং এবং আর্ক ওয়েন্ডিং পাশাপাশি সমানতালে চলছে।

গ্যাস ওয়েল্ডিং

যে কোন একটি দাহ্য গ্যাস ও অক্সিজেনের জ্বলন্ত মিশ্রণ হতে সরবরাহকৃত উত্তাপের মাধ্যমে যে ওয়েন্ডিং করা হয় তাকে গ্যাস ওয়েন্ডিং বলে। এই পদ্ধতিতে ওয়েন্ডিং টর্চের মাধ্যমে অক্সিজেন ও এসিটিলিন বা অন্য যে কোন দাহ্য গ্যাস প্রয়োজনীয় অনুপাতে মিশ্রিত করে নজেলের মাধ্যমে উচ্চ বেগে প্রবাহিত করে স্পার্ক লাইটারের সাহায্যে আনিয়ে শিখা তৈরি করা হয়, উক্ত শিখার উত্তাপে ওয়েল্ডিং করা হয়। গ্যাস ওয়েন্ডিং এ অক্সিজেন ও এসিটিলিন গ্যাস সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হয়।

গ্যাস ওয়েল্ডিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পিপিই এর প্রকারভেদ ও প্রয়োজনীয়তা

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা Personal Protective Equipment (PPE) বলতে বুঝায় এক জন ওয়েল্ডার ওয়েল্ডিং করার সময়, অগ্নি শিখা ও উত্তপ্ত ধাতু হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে সকল নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে। গ্যাস ওয়েল্ডিং করার সময় একজন ওয়েল্ডারের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পিপিই গুলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১. চোখ ও মুখের সুরক্ষা সরঞ্জাম 

ওয়েল্ডার চোখ ও মুখের সুরক্ষার জন্য যে সকল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরগ্রাম ব্যবহার করে-
(ক) গ্যাস ওয়েল্ডিং গগলস (Gas Welding Goggles)
(খ) হ্যালমেট/ফাল ক্যাপ (Halmat / Scal Cap)
(গ) সেফটি গগলস (Safety Goggles)

২. শ্বাস যজ্ঞের সুরক্ষা সরঞ্জাম 

ওয়েন্ডার শ্বাস যন্ত্রের সুরক্ষার জন্য যে সকল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম
ব্যবহার করে -
(ক) গ্যাস রেসফিরেটর (Gas Respirator)
(খ) গ্যাস মাস্ক (Gas Mask)

৩. ত্বকের সুরক্ষা সরঞ্জাম :

ওয়েল্ডার ত্বকের সুরক্ষার জন্য যে সকল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে
(ক) চামড়ার এপ্রোন ( Leather Apron )
(খ) আর্ম গার্ড (Arms Guard)
(গ) কটন জাতীয় মোটা কাপড়ের পোশাক (Cotton Dress)

৪. কানের সুরক্ষা সরঞ্জাম

 ওয়েল্ডার কানের সুরক্ষার জন্য যে সকল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে
(ক) ইয়ার মার্ফ (Ear Mat)
(খ) ইয়ার প্লাগ (Ear Plug )

৫. হাত ও পায়ের সুরক্ষা সরঞ্জাম 

ওয়েল্ডার হাত ও পায়ের সুরক্ষার জন্য যে সকল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম
(ক) হ্যান্ড গ্লোভস (Hand Gloves )
(খ) সেফটি সুজ (Safety Shoes) ব্যবহার করে-
পিপিই এর প্রয়োজনীয়তা: গ্যাস ওয়েল্ডিং এর সময় প্রায় ৩৪০০ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রায় অগ্নি শিখা জ্বালীয়ে ধাতু ঘলিয়ে ওয়েল্ডিং করতে হয়। এই অগ্নি শিখা, হাতে বা শরীরের অন্য কোন স্থানে লেগে বিপদ হতে পারে। উত্তপ্ত গলিত ধাতু চিটকে এসে ওয়েল্ডার এর শরীরের যে কোন অংশ পুড়ে ফেলতে পারে। উত্তপ্ত কার্যবস্তু হাতে লেগে বা পাঁয়ে পড়ে ক্ষতি সাধন হতে পারে। তাই এই সকল বিপদের হাত থেকে একজন ওয়েল্ডারকে রক্ষা পেতে হলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার অত্যাবশ্যক। সঠিক ভাবে পিপিই সমূহের ব্যবহার করলে নিরাপদে ও সুষ্ঠ ভাবে ওয়েল্ডিং সুসম্পন্ন করা যায়।

গ্যাস ওয়েল্ডিং সরঞ্জাম এর নাম - Gas Welding Equipment - গ্যাস ওয়েল্ডিং

গ্যাস দ্বারা সৃষ্টি ক্ষয় ক্ষতি

গ্যাস শুধুমাত্র গ্যাস ওয়েল্ডিং বা কাটিং কাজে ব্যবহার হয় এমন নয়, রান্নার কাজে, তাপ উৎপাদন, গাড়ি চালানো, ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজেও গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। এই গ্যাস সমূহ প্রধান সংরক্ষণ ট্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় কাজের স্থানে/ওয়ার্কশপে সরবরাহ করা হয় আবার পরিবহনযোগ্য সিলিন্ডারের মাধ্যমেও সরবরাহ করা হয়। ব্যবহার যাই হোক না কেন গ্যাস সমূহ প্রায় সবসময় আমাদেরকে উচ্চ চাপে সংরক্ষণ ও সরবরাহ করতে হয়। এই উচ্চ চাপ বা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণে গ্যাস সমূহের ব্যবহার ও সরবরাহ কালে অনেক ধরনের বিপদ হতে পারে। গ্যাস দ্বারা সৃষ্ট ক্ষয় ক্ষতি সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো। গ্যাস সমূহ মারাত্মক ভাবে বিষাক্ত হতে পারে। ধাতব পদার্থের ক্ষয় সাধন করতে পারে, আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, অক্সিডেশন ঘটাতে পারে। গ্যাস সমূহের সঠিক সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা করা না গেলে এটি পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়াও গ্যাস লিকেজ ও কার্বন মনো-অক্সাইড দূষণের মাধ্যমে ক্ষয় ক্ষতি হতে পারে।

ক) গ্যাস লিকেজ:

গ্যাস সরবরাহ লাইন বা গ্যাস সিলিন্ডার এর ফিটিংস সমূহের সংযোগ স্থলে গ্যাস লিকেজ হতে পারে। এই লিকেজ গ্যাস বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করতে পারে বা অগ্নি শিখার সংস্পর্শে মারাত্মক বিপদ ঘটাতে পারে।
খ) কার্বন মনোক্সাইড দূষণ:
ব্যবহার কালে যখন গ্যাস সমূহ অসম্পূর্ণ প্রজ্বল ঘটে তখন কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। ওয়ার্কশপে যথাযথ ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা না থাকলে, পোড়া গ্যাসের কার্বন মনোক্সাইড মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর হয়ে পড়ে।

অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা

দিতে হবে এবং অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র সমূহের সাহায্য নিতে হবে, প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসে কল করতে হবে। গ্যাস ওয়েল্ডিং এর ফ্রেম তৈরিতে দাহ্য গ্যাসের ব্যবহার হয়। আমরা জানি দাহ্য গ্যাস সমূহ শুধু মাত্র দাহাই নয় এরা বিস্ফোরকও বটে ফলে গ্যাস ফ্রেম তৈরি করার ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গ্যাস ফ্রেম তৈরী কালে যে কোন ধরণের বিপদের আশংকা দেখা দিলে সাথে সাথে এলার্ম বাজিয়ে Extinguishers), খাদি ভর্তি বালতি, স্মোক ডিটেক্টর (Smoke Detector), ফায়ার স্যুট (Fire Suit), স্মোক এলার্ম (Smoke Alarms), হোম ফায়ার স্প্রিংলার (Home Fire Sprinklers), কার্বন মনোক্সাইড এলার্ম (Carbon Monoxide Alarm) ইত্যাদি। সাধারনত যে সকল যন্ত্র বা সরঞ্জাম আগুন নিভাতে ব্যবহার করা হয় তাদেরকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বলে। সচরাচর ব্যবহৃত অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র সমূহের তালিক নিম্নে দেয়া হলো। যেথা: ফায়ার এক্সটিংগুইসার (Fire

গ্যাস ওয়েল্ডিং কালে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত শারীরিক বিপর্যয়ের কারণ

গ্যাস ওয়েল্ডিং এর সময় ফ্রেম প্রস্তুতকালে প্রচুর পরিমাণ দূষিত গ্যাস ও আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি, ইনফ্রারেড রশ্মি ও ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় যা মানবদেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। এই সকল ক্ষতিকর রশ্মি, দূষিত গ্যাস ও ধোঁয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে ওয়েল্ডিং করলে, ওয়েল্ডার শ্বাস কষ্টে ভোগা সহ শ্বাসযন্ত্রের নানা জটিলতায় ভুগতে পারে। ক্ষতিকর গ্যাস ও ধোঁয়ার কারণে সৃষ্ট শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত

শারিরীক বিপর্যয়ের কারণ সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল। 

১) শ্বাস যন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নাক ও মুখে গ্যাস রেস্পিরেটর বা গ্যাস মাক্স ব্যবহার না
২) ওয়েল্ডিং শপে পর্যাপ্ত এডজস্ট ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকা।
৩) ওয়েল্ডিং শপে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা না থাকা ।
৪) গ্যাস লিকেজ।
৫) জ্বালানী গ্যাসের অপর্যাপ্ত প্রজ্বলন।
৬) কার্যবস্তুকে ময়লা মুক্ত না করে ওয়েল্ডিং করা।
৭) দূষিত পদার্থের উপস্থিতি আছে এমন গ্যাস দ্বারা ওয়েল্ডিং করা।

গ্যাস ওয়েন্ডিংকালে সিলিন্ডার ও সরঞ্জামাদি পতনজনিত বিপদ সহ গ্যাস ওয়েল্ডিং কালে গ্যাস সিলিন্ডার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পড়ে গিয়ে মারাত্মক বিপদ ঘটাতে পারে। নিম্নে এই সংক্রান্ত সম্ভাব্য বিপদসমূহ তুলে ধরা হলো

১. সিলিন্ডার পড়ে যাওয়ার কারণে

ক) বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
খ) কর্মিদের গায়ে আঘাত করতে পারে।
গ) আঘাতজনিত কারনে প্যাস রেগুলেটর কার্যকারিতা হারাতে পারে।
গ্যাস ওয়েল্ডিং সরঞ্জাম এর নাম - Gas Welding Equipment - গ্যাস ওয়েল্ডিং

২. ওয়েন্ডিং টর্চ পড়ে যাওয়ার

ক) হোজ পাইপে আগুন ধরে যেতে পারে।
খ) কর্মিদের গায়ে বা শপে রক্ষিত দাহ্য পদার্থে আগুন ধরে যেতে পারে।

৩. কার্যৰস্ত পড়ে গিয়ে

ক) ওয়েল্ডার এর গায়ে আঘাত করতে পারে।
খ) ওয়েভারের শরীর এর যে কোনো অংশ পুড়িয়ে দিতে পারে।

৪. স্পার্ক লাইটার পড়ে গিয়ে 

আঘাত করতে পারে কিংবা নিজেই অকেজো হয়ে যেতে পারে।

৫. ফায়ার ব্রিফ পড়ে গিয়ে

 ওয়েল্ডারের পায়ে আঘাত করতে পারে।
উপরোক্ত কারণে গ্যাস সিলিন্ডার হ্যান্ডেলিং এর সময় অত্যান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার অবশ্যই ট্রলি দিয়ে আনা-নেয়া করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার অবশ্যই দুই জনে ধরে নাড়া-চাড়া করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার গড়িয়ে গড়িয়ে স্থানাস্তর করা যাবে না।

আলানি (দাহ্য) গ্যাস

যে সকল গ্যাস অক্সিজেন সহযোগে প্রজ্বলিত হয়ে প্রচুর পরিমাণ তাপ ও আলোক শক্তি উৎপন্ন করে সেই সকল গ্যাসকে দাহ্য গ্যাস বলে। দাহ্য গ্যাস সমূহের মান এদের ক্যালরিফিক ভ্যালুর উপর নির্ভর করে। সাধারণত প্রজ্বলন কালে দূর্গন্ধ ও ধোঁয়া তৈরী করে না এবং দামে সস্তা এমন গ্যাস সমূহকে গ্যাস ওয়েল্ডিং এর জন্য উত্তম মনেকরা হয়। নিম্নে কয়েকটি দাহ্য প্যাসের নাম উল্লেখ করা হল। এসিটিলিন (Acetylene), হাইড্রোজেন (Hydrogen), মিথেন (Methane), ইবেন (Bthen), প্রোপেন (Propene), বিউটেন (Butanc), LPG ও বেদন (Benzol) ইত্যাদি।

জ্বালানি(দাহা) গ্যাস এর প্রয়োজনীয়তা

আমরা জানি জ্বালানি গ্যাস অক্সিজেন সহযোগে প্রজ্বলিত হয়ে প্রচুর পরিমান তাপ উৎপন্ন করে, আর যে কোন গ্যাস ওয়েল্ডিং এর ক্ষেত্রে তাপ অপরিহায অর্থাৎ তাপ ছাড়া ওয়েল্ডিং করা প্রায় অসম্ভব। তাই আगान गान প্রজ্বলন ছাড়া গ্যাস ওয়েন্ডিং করা সম্ভব হয় না। অতএব গ্যাস ওয়েল্ডিং এর ক্ষেত্রে জ্বালানী গ্যাস অপরিহার্য। এসিটিলিন গ্যাস এর উচ্চ প্রজ্বলন ও তাপ উৎপাদন ক্ষমতার কারনে গ্যাস ওয়েন্ডিং এর জন্য সবছেয়ে উপযুক্ত আলানী গ্যাস হল এসিটিলিন।

জ্বালানি (দাহ্য) গ্যাস এর শ্রেণি বিন্যাস

যখন কোন জ্বালানি গ্যাসিয়াস ফর্মে থাকে তখন তাকে জ্বালানি বা দাহ্য গ্যাস বলে। এরা সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে।
(ক) হাইড্রোকার্বন (মিথেন, ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন)
(খ) হাইড্রোজেন,
(গ) কার্বন মনোক্সাইড।
এরা প্রচুর পরিমাণ তাপ ও আলোকশক্তি ধারণ করে রাখে। পরিবহনের সুবিধার্থে জ্বালানি গ্যাসকে আবার দুই অবস্থায় রাখা হয়। যথা-
(ক) গ্যাসিয়াস বা বায়বীয় জালানি,
(খ) লিকুইড বা তরল জ্বালানি।
উপরোক্ত কারণে গ্যাস সিলিন্ডার হ্যান্ডেলিং এর সময় অত্যান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার অবশ্যই ট্রলি দিয়ে আনা-নেয়া করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার অবশ্যই দুই জনে ধরে নাড়া-চাড়া করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার গড়িয়ে গড়িয়ে স্থানাস্তর করা যাবে না। আবার উৎপাদনের কৌশলের দিক থেকে জ্বালানি গ্যাসকে নয় ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
(ক) প্রডিউসার গ্যাস (Producer Gas)
(খ) ওয়াটার গ্যাস (Water Gas)
(গ) কোল গ্যাস (Coal Gas)
(ঘ) সিন গ্যাস (Syn gas)
(ঙ) উড গ্যাস (Wood Gas)
(চ) আনকম্প্রেসড হাইড্রোজেন বা কম্প্রেসড হাইড্রোজেন গ্যাস (Uncompressed Hydrogen or Compressed Hydrogen Gas).
(ছ) বায়োগ্যাস (Biogas)
(জ) ব্লাস্ট ফার্নেস গ্যাস (Blast Furnace Gas)
(ঝ) এসিটিলিন গ্যাস (Acetylene Gas)
খনি থেকে আহরিত গ্যাসকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়
(ক) প্রোপেন (Propane)
(খ) বিউটেন (Butane),
(গ) লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (Liquid Petroleum Gas)

আপানি (দাহ্য) গ্যাস এর বৈশিষ্ট্য

(ক) জ্বালানি গ্যাস অক্সিজেন সহযোগে প্রজ্বলিত হয়ে প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তি ও আলোকশক্তি উৎপন্ন করে।
(খ) যে জ্বালানি গ্যাসের তাপীয় মান (Calorific Value), যতো বেশি সেই গ্যাস ততো বেশি তাপ উৎপন্ন করতে পারে।
(গ) যে সকল জ্বালানি গ্যাস প্রজ্জ্বলনের সময় কোন ধোঁয়া উৎপন্ন করে না তারা উৎকৃষ্ট মানের জ্বালানি গ্যাস।
(ঘ) পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ থাকলে উৎকৃষ্ট মানের আলাদি গ্যাস সম্পূর্ণ রূপে প্রজ্বলিত হয়, এবং অধিক পরিমান তাপ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
(ঙ) উৎকৃষ্ট মানের জ্বালানি গ্যাস প্রचলনের ফলে সর্বনিম্ন পরিমাণ ক্ষতিকারক পদার্থ ও গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ও নক্স নির্গত করে।

জালানী গ্যাসের সিলিন্ডার এর বৈশিষ্ট্য

জ্বালানী গ্যাস সিলিন্ডারের কতগুলি আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে যা সাহায্যকারী গ্যাস সিলিন্ডার হতে তাদেরকে আলাদা করেছে। ওয়েল্ডিং কাজে অনেক ধরনের জাপানী গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে, তার মধ্যে এসিটিলিন, এলপিজি ও হাইড্রোজেন গ্যাস অন্যতম।

এসিটিলিন গ্যাস সিলিন্ডারের বৈশিষ্ট্য

(ক) এটি আকারে খটো কিন্তু ব্যাস বেশি।
(খ) এটি সাধারণত খয়েরি রংয়ের হয়ে থাকে।
(গ) ভিতরে মৌচাকের মতো খোপ বা চেম্বার থাকে।
(ঘ) লেট হ্যান্ড গ্রেড বা প্যাঁচ হয়ে থাকে।
(ঙ) সেফটি ভাব থাকে।
(চ) এটি শুধুমাত্র দাহ্যই নয়, এটি বিস্ফোরক গ্যাসও বটে।
(ছ) শুধুমাত্র হাইপ্রেসারে ব্যবহার করা যায়।

হাইড্রোজেন গ্যাস সিলিন্ডারের বৈশিষ্ট্য

(ক) এটি সাধারনত লাল রঙের হয়ে থাকে।
(খ) সিলিন্ডার স্টিলের তৈরী এবং অত্যন্ত মজবুত হয়ে থাকে।
(গ) নেকট হ্যান্ড থ্রেড বা প্যাঁচের হয়ে থাকে।
(ঘ) সেফটি ভাব থাকে।
(ঙ) অন্যান্য গ্যাস সিলিন্ডারের তুলনার এটি অত্যন্ত এখানের হয়ে থাকে ।
(চ) শুধুমাত্র হাইপ্রেসারে ব্যবহার করা যায়।

গ্যাস ওয়েন্ডিং এর সাহায্যকারী গ্যাস

গ্যাস ওয়েল্ডিং এর সাহায্যকারী গ্যাস এর সংজ্ঞা
যে সকল গ্যাস প্রজ্বলনের সময় নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে সেই সকল গ্যাসকে সাহায্যকারী গ্যাস বলা হয়। গ্যাস ওয়েল্ডিং এর ক্ষেত্রে একমাত্র সাহায্যকারী গ্যাস অক্সিজেন গ্যাস। মুক্ত অবস্থায় অক্সিজেন রঙ, গন্ধ ও স্বাদহীন একটি গ্যাস। অক্সিজেনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল সে নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। অক্সিজেনের এই বৈশিষ্ট্যের কারণে একে সাহায্যকারী গ্যাস হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।

সাহায্যকারী গ্যাস এর প্রয়োজনীয়তা

গ্যাস ওয়েল্ডিং কালে যে দুটি গ্যাস ব্যবহার করতে হয় তার মধ্যে একটি হল জ্বালানী গ্যাস অন্যটি সাহায্যকারী গ্যাস। সাহায্যকারী গ্যাস বা অক্সিজেন ছাড়া আগুন জ্বালানো সম্ভব নয়। গ্যস ওয়েল্ডিং এর সময় অগ্নিশিখার তাপমাত্রা প্রায় ৩৪০০ডিগ্রী সেঃ এ উন্নিত করতে হয় যা বাতাসের অক্সিজেনের পাশাপাশি অতিরিক্ত অক্সিজেনের সরবরাহ ছাড়া সম্ভব নয়। তাই গ্যাস ওয়েল্ডিং ও গ্যাস কাটিং কাজে এই গ্যাসের উপস্থিতি অপরিহার্য।

সাহায্যকারী গ্যাস এর বৈশিষ্ট্য

নিম্নে সাহায্যকারী গ্যাস অর্থাৎ অক্সিজেন গ্যাসের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো
(ক) অক্সিজেন পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচাইতে সাধারণ রাসায়নিক উপাদান। এর প্রতীক “O” এবং পরমাণবিক সংখ্যা ৮।
(খ) এটি বায়ু তৈরীর প্রধান উপাদান এবং বায়ুমন্ডলে এর উপস্থিতি ২১.৩ শতাংশ, যা বায়ুমন্ডলের প্রায় এক পঞ্চমাংশ।
(গ) মুক্ত অবস্থায় অক্সিজেন রঙ, গন্ধ ও স্বাদহীন একটি গ্যাস।
(ঘ) অক্সিজেনের ঘনত্ব ১.৪২৯ গ্রাম/লিটার, এর গলনাঙ্ক ৮২১৮.৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং পানিতে সামান্য দ্রবীভূত হয়।
(ঙ) বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি প্রাণির অক্সিজেন দরকার, শ্বাস নেওয়ার সময় প্রাণি অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে।
(চ) অক্সিজেনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল সে নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। অক্সিজেনের এই বৈশিষ্ট্যের কারণে একে সাহায্যকারী গ্যাস হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। তাই আমাদের গ্যাস ওয়েল্ডিং ও গ্যাস কাটিং কাজে এই গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

সাহায্যকারী গ্যাস সিলিন্ডার এর বৈশিষ্ট্য 

সাহায্যকারী গ্যাস সিলিন্ডার বা অক্সিজেনের সিলিন্ডার এর বৈশিষ্ট্য শিল্পে নেয়া হলো
১. এটি আকারে লম্বা কিন্তু ব্যাস কম ।
২. সাধারণত এটি কালো রঙের হয়ে থাকে ।
৩. ভিতরের অংশ ফাঁপা।
৪. সিলিন্ডারের ভার রাইট হ্যান্ড গ্রেডের হয়ে থাকে।
৫. সেফটি ভাল্ব থাকে না।
৬. লো প্রেসার বা হাইপ্রেসার দুই অবস্থাতেই ব্যবহার করা
যায়।

গ্যাস ওয়েল্ডিং সরঞ্জাম

প্রেসার রেগুলেটর (Pressure Regulator)
সিলিন্ডার হতে গ্যাসকে প্রয়োজনীয় চাপে সরবরাহ করার জন্য প্রতিটি সিলিন্ডারের সাথে একটি করে রেগুলেটর থাকে। এসিটিলিন সিলিন্ডারের সুরক্ষার জন্য রেগুলেটরে 'ফ্ল্যাশব্যাক এরেস্টর' নামে বিশেষ একটি যন্ত্র থাকে। এছাড়া একটি সেফটি ভালভ ও থাকে।

গ্যাস রেগুলেটর ব্যবহারের সতর্কতা সমূহ

ক) গ্যাস রেগুলেটরে কখনোই তেল বা গ্রীজ ব্যবহার করা যাবে না। তেল বা বীজ হতে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
খ) সিলিন্ডারের গ্যাস ঋপেনিং ভাব খুব আস্তে আস্তে খুলতে হবে।
গ) শিখা জ্বালানোর পূর্বে সেফটি তাষ ও ফ্ল্যাশব্যাক ডেটার ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ঘ) অক্সিজেন সিলিন্ডারের রেগুলেটর এসিটিলিন সিলিন্ডারে, কিংবা এসিটিলিন সিলিন্ডারের রেগুলেটর অক্সিজেন সিলিন্ডারে লাগানো যাবে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url