fundamentals of welding metallurgy - ফেরাস মেটাল কাকে বলে
fundamentals of welding metallurgy - ফেরাস মেটাল কাকে বলে
fundamentals of welding metallurgy - ফেরাস মেটাল কাকে বলে
ফান্ডামেন্টাল ওয়েন্ডিং মেটালার্জি (fundamental Welding Metallurgy)
মানব সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে মেটালার্জির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মেটালার্জি হল ধাতু সম্পর্কিত বিদ্যা। সুতরাং ভূত্বক হতে প্রাপ্ত ধাতুর আকরিক থেকে লাভজনক প্রক্রিয়ায় ধাতু নিষ্কাশন, উক্ত ধাতুসমূহের গুণাগুণের পর্যালোচনা ও মান উন্নয়নের কৌশল এবং কীভাবে উক্ত ধাতু বা ধাতব শংকর মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যায় এসকল বিষয়সমূহ বিজ্ঞানের এ শাখায় আলোচনা করা হয়। ধাতুকে ওয়েন্ডিং করার পূর্বে, ওয়েন্ডিংকালীন এবং ওয়েন্ডিং এর পরে ধাতুর ধর্মসমূহের যে পরিবর্তন ঘটে তা নিয়ে এ অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করবো। এটি মেটালার্জির ক্ষুদ্রতম তবে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।মেটালার্জি ও ওয়েল্ডিং মেটালার্জি (Metallurgy and Welding Metallurgy )
মানুষ কখন এবং কোন সময় থেকে ধাতুর ব্যবহার ও সেই সাথে মেটালার্জির চর্চা শুরু করেছে তা আজও আমাদের কাছে অজানা। তবে ধাতুবিজ্ঞানীরা (Metallurgists) অনুমান করেন যে, প্রায় পাচ হাজার বছর পূর্বে মানুষ ধাতু ব্যবহার করে আসছে। যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও সাধনার ফলে মানুষ ধাতব পদার্থের বহুবিধ ব্যবহারের শিক্ষা লাভ করে। মানব সভ্যতার প্রধান উৎস হল ধাতব পদার্থের ব্যবহার। আমাদের নিত্যদিনের কর্মজীবনে ধাতব পদার্থের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি তার খনিজ সম্পদের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। বর্তমান যুগ যে লৌহযুগ তা নয়, অলৌহজ ধাতব যুগও বটে। আজকাল জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধাতুর ব্যবহার অপরিসীম। পারমাণবিক চুল্লী হতে আরম্ভ করে রকেট, বিমান, সামরিক অস্ত্র বা যুদ্ধাস্ত্র বহুল ভাবে ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং সেই সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন উৎপাদনের প্রতিটি শাখায় ধাতু ব্যবহারের ব্যাপকতা দেখা যায়। ধাতুর বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো। যথা-• বাসস্থান নির্মাণ ও মেরামত
• পরিবহণ নির্মাণ ও মেরামত
• কৃষি সরঞ্জামাদি নির্মাণ
বস্ত্র উৎপাদনের যন্ত্রপাতি নির্মাণ ও মেরামত
সমরাস্ত্র নির্মাণ
• চিকিৎসা বা শৈলবিদ্যার যন্ত্রপাতি তৈরি
• বিলাসদ্রব্য ও খেলনা প্রস্তুতকরণের যন্ত্রপাতি ও তার কাঁচামাল
• তৈজষপত্র, গয়না ও শখের দ্রব্য প্রস্তুত
fundamentals of welding metallurgy - ফেরাস মেটাল কাকে বলে
ফেরাস মেটাল (Ferrous Metal) পরিচিতি
যে ধাতুর প্রধান উপাদান লোহা তাকে ফেরাস মেটাল বা লৌহজাত ধাতু বলে। যেমন- স্টিল, ঢালাই লোহা, স্টেইনলেস স্টিল ইত্যাদি। এখানে আমরা লৌহজাত ধাতুর মধ্যে ঢালাই লোহা, কার্বন স্টিল (লো-কার্বন স্টীল, মিডিয়াম কার্বন স্টিল ও হাই কার্বন স্টিল), ঢালাই স্টীল, বিভিন্ন এ্যালয় স্টিল, স্টেইনলেস স্টিল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবো ।
লৌহ আকরিক (Iron Ores)
যে সকল খনিজ পদার্থ হতে লাভজনকভাবে লৌহ নিষ্কাশন করা যায় তাদেরকে লৌহ আকরিক বলে। খনি হতে উত্তোলনের সময় এর সাথে অবিশুদ্ধ পদার্থ যেমন- মাটি, বালি, পাথর, সালফার, ফসফরাস ইত্যাদি মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এটা দেখতে অনেকটা পাথরের মত। এই আকরিক সমূহ খনিতে কার্বনেট, হাইড্রেট ও অক্সাইড রূপে মাটি ও পাথরের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে; যার ফলে এটি অনেকটা পাথরের ন্যায় দেখায়।লৌহ আকরিক সাধারণত পাঁচ প্রকার। যথা-
১. হেমাটাইট ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ লোহা থাকে; যা দেখতে উজ্জল লাল বর্ণের হয়।
২. ম্যাগনেটাইট ৬৫ থেকে ৭৫ ভাগ লোহা থাকে। এটা দেখতে সাধারণত ধূসর বর্ণের হয়।
৩. ব্রাউন হেমাটাইট ৫০ থেকে ৬৫ ভাগ লোহা থাকে, যা দেখতে লালচে বর্ণের হয়।
৪. সিডারাইট ৪০ থেকে ৫০ ভাগ লোহা থাকে। এটা দেখতে ধূসর বর্ণের হয়। ৫. আয়রণ পাইরাইট যা নিম্ন মানের আকরিক।
ঢালাই লোহা (Cast Iron)
ঢালাই লোহার প্রধান উপাদান হলো লোহা, কার্বন ও সিলিকন। এর সাথে অন্যান্য মৌল, যথা- ম্যাঙ্গানিজ,সালফার ও ফসফরাস কিছু পরিমাণে মিশ্রিত থাকে। সহজে গলন ও ঢালাই করা যায় বলে তাকে কাস্ট আয়রণ বলে। কাস্ট আয়রণ মিশ্রগুণ সম্পন্ন এবং এর যান্ত্রিক গুণাগুণ ও কার্বন গঠনের ভিন্নতা অনুযায়ী তাকে প্রাথমিক ভাবে তিন শ্রেণিতে বিন্যাস করা যায় যথা:
• গ্রে কাস্ট-আয়রণ (Grey Cast-Iron)
• হোয়াইট-কাস্ট-আয়রণ (White-Cast-Iron )
• ম্যালিয়েবল-কাস্ট-আয়রণ (Malleable-Cast-Iron )
ঢালাই লোহা বা কাস্ট আয়রণের কার্বনের গাঠনিক পরিবর্তন নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর নির্ভরশীল যথা-
শীতলকরণের দ্রুততার হার।
• রাসায়নিক মিশ্রণ।
• গ্রাফাইটের নিউক্লিয়াস সমূহ এবং অন্যান্য পদার্থের উপস্থিতি।
গ্রে ও হোয়াইট কাস্ট আয়রণ এর মধ্যে নিম্নবর্ণিত বিভিন্ন উপাদান থাকে-
গ্রে-কাস্ট আয়রণ
গলিত কাস্ট আয়রনকে যদি ধীর গতিতে শীতল করা হয় তাহলে তার মধ্যে মুক্ত কার্বন বা গ্রাফাইট দানা গঠিত হয়। যদি কাস্ট আয়রণে উক্ত গ্রাফাইটের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে তাকে গ্রে কাস্ট আয়রণ বলে।গ্রে-কাস্ট আয়রণের গুণাগুণ
- এর রং ধূসর কালো।
- এটি উত্তম রাসায়নিক ক্ষয়রোধক।
- এটি ভঙ্গুর কিন্তু সহজে মেশিনিং করা যায়।
- এর ভিতর দিয়ে কম্পন সঞ্চারিত হয় না।
- এতে বিদ্যমান গ্রাফাইট লুব্রিকেন্টের কাজ করে।
- তারল্যের কারণে এটা দ্বারা সূক্ষ্ম ও জটিল আকৃতির ঢালাই করা যায়।
- এটি উত্তম তাপ রোধক।
- এর কাঠিন্য ১০০ হতে ৩৫০ ব্রিনেল নম্বর।
- এর টানা পীড়ন ২ হতে ৬ টন প্রতি বর্গ সে.মি
- চাপা পীড়ন ৬ হতে ১৫ টন প্রতি বর্গ সে.মি।
- এটি উচ্চচাপ সহ্য করতে পারে।
ব্যবহার
যে-কাস্ট আয়রণ ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ ঢালাই কাজে ব্যবহার করা হয়। মটর ইঞ্জিন ব্লক, পিষ্টন রিং, লেদ, সেপার ও মিলিং বেড, ওয়াটার পাইপ, ঘুর্ণায়মাণ যন্ত্রাংশ, বিয়ারিং, সেলাই মেশিনের পার্টস ইত্যাদি তৈরিতে কাস্ট আয়রণ ব্যবহৃত হয়।
হোয়াইট কাস্ট আয়রণ
গলিত কাস্ট আয়রণকে যদি দ্রুত শীতল করা হয় তাহলে সিমেন্টাইট এর সৃষ্টি হয়। এ ধরনের কাস্ট আয়রণ অত্যন্ত শক্ত, মেশিনে সহজে কাঁটা কষ্টকর এবং দেখতে অনেকটা উজ্জল রূপালী সাদা রং বিশিষ্ট। কাস্ট আয়রণে উক্ত সিমেন্টাইটের পরিমাণ যদি বেশি থাকে তবে তাকে হোয়াইট কাস্ট আয়রণ বলে।গুণাগুণ
- এর রং উজ্জ্বল রূপালি সাদা।
- এটি অত্যন্ত শক্ত কিন্তু ভঙ্গুর এর ডাম্পিং গুণাগুণ খুব কম।
- এটি ক্ষয় প্রতিরোধক।
- এটি মেশিনিং করা খুব কষ্টসাধ্য। এটি কাঠিন্য ৫০০ ব্রিনেল নম্বর।
ব্যবহার
হোয়াইট কাস্ট আয়রণ অত্যধিক শক্ত বলে সাধারণত মেশিনিং কাজে এর ব্যবহার সীমিত। তবে বোরিং মিলের
রোল, গাড়ীর ঢাকা, ব্লক ক্রাসার প্রভৃতি তৈরি করতে গ্রে কাস্ট আয়রণ ব্যবহৃত হয়।
কার্বন ইস্পাত (Carbon Steel)
শুধুমাত্র কার্বন ও লোহার মিশ্রণে কার্বন ইস্পাত তৈরি হয়। কার্বন ইস্পাতে সাধারণত ০১ হতে ১.৫% কার্বন থাকে। কার্বন ইস্পাতেও অতি সামান্য পরিমাণে সিলিকন, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার ও ফসফরাস সংযুক্ত থাকে; যা অপসারণযোগ্য নয়। কার্বন ইস্পাত তিন প্রকার। যথা-• লো- কার্বন ইস্পাত (Low- Carbon Steel) (কার্বন ০.০৫-০.৩০%।
• মিডিয়াম কার্বন ইস্পাত (Medium Carbon Steel) (কার্বন 0.030.5%
• হাই কার্বন ইস্পাত (High Carbon Steel) কার্বন ০.৫-১.৫%)
মাইন্ড স্টিল (Mild Steel)
সাধারণত ০.১৫% হতে ০.৩০% কার্বনবিশিষ্ট লো-কার্বন ইস্পাতকে মাইল্ড স্টিল বা সংক্ষেপে এমএস (MS) বলে। শিল্প কারখানায় বিভিন্ন আকৃতির এমএস বার ও এমএস শীট ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।ব্যবহার
রিভেট, শীট, পাইপ, পেরেক, চেইন প্লেট, থালা ইত্যাদি তৈরি করতে লো কার্বন ইস্পাত ব্যবহৃত হয়। মিডিয়াম কার্বন ইস্পাত ফ্র্যাঙ্ক শ্যাফট (crank shaft), অটোমোবাইল স্প্রিং, এনভিল, ব্যান্ডস, চিজেল (ছেনী), পাঞ্চ, শেয়ার ব্রেড, ট্যাপ, ডাই, রিমার ফাইল প্রভৃতি জিনিস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
লো-কার্বন ইস্পাত
লো-কার্বন ইস্পাতকে সহজেই ওয়েল্ডিং করা ও মেশিনিং করা যায়। এদের গলনাংক ১৫১৫ হতে ১৫৩৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। তুলনামুলকভাবে এটা সস্তা এবং এর কম উৎপাদন খরচ, উচ্চশক্তি, সহজে জোড়া দেওয়া যায় ইত্যাদি গুণাগুণের এর কারণেই শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার্য যন্ত্রপাতির সংখ্যা এ ধাতুরই বেশি। লো কার্বন ইস্পাতকে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে ওয়েল্ডিং করা যায়-গ্যাস ওয়েল্ডিং
আর্ক ওয়েল্ডিং
(ক) মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং
(খ) সাবমার্জড আর্ক ওয়েল্ডিং
(গ) মিগ ওয়েল্ডিং
(ঘ) টিগ ওয়েল্ডিং
(ঙ) প্লাজমা আর্ক ওয়েল্ডিং
থারমিট ওয়েল্ডিং
রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং
ইলেকট্রোপ্লাগ ওয়েল্ডিং
মিডিয়াম কার্বন ইস্পাত
মিডিয়াম কার্বন ইস্পাতকে লো-কার্বন ইস্পাতের মত এত সহজে ওয়েল্ডিং করা যায় না। কারণ এতে বেশি কার্বন থাকায় ভঙ্গুর ওয়েল্ড গঠিত হয়। এদের গলনাংক ১৪৯২ হতে ১৫১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। লো-কার্বন ইস্পাত থেকে এটা বেশ শক্ত ও কঠিন। এই ধাতু ওয়েল্ডিং করে দ্রুত ঠান্ডা করলে তাপ প্রভাবিত অংশে মার্টেনসাইট গঠিত হয়ে জোড়ার স্থান ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাছাড়া অতিরিক্ত কঠিন হওয়ার কারণে মেশিনিং এর অযোগ্য ওয়েল্ড গঠিত হয়। অবশ্য আলাদা কৌশল ও সঠিক ইলেকট্রোডের ব্যবহারে সম্ভাব্য ফাটল বন্ধ করা যায়।ওয়েন্ডিং করার পদ্ধতি
মিডিয়াম কার্বন ইস্পাতকে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে ওয়েল্ডিং করা যায় :-(১) ফ্লাক্স শীল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং
(২) অক্সি-এসিটিলিন ওয়েল্ডিং
(৩) রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং
(৪) থারমিট ওয়েল্ডিং
(৫) সাবমার্জড আর্ক ওয়েল্ডিং।
হাই কার্বন ইস্পাতের ওয়েল্ডিং
হাই কার্বন ইস্পাতে ওয়েন্ডিং করা কষ্টসাধ্য। হাই কার্বন ইস্পাতের ভিতরে উচ্চহারে কার্বনের পরিমাণই এর ওয়েল্ডিং এর সীমাবদ্ধতার কারণ। শুধুমাত্র রিপেয়ারের কাজ ছাড়া একে ওয়েল্ডিং করা হয় না বললেই চলে। এর গলনাংক ১৪০৫ হতে ১৪৯২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।হাই কার্বন ইস্পাত ওয়েল্ডিং করার পদ্ধতি
মেরামত কাজের জন্য হাই-কার্বন ইস্পাতকে ওয়েল্ডিং করা হয়। নিম্নলিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে হাই-কার্বন ইস্পাতকে ওয়েন্ডিং করা যায়-অক্সি-এসিটিলিন ওয়েল্ডিং
থারমিট ওয়েল্ডিং
• ফ্লাক্স শীল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং
• রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং
কাস্ট ইস্পাতের ওয়েল্ডিং
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে কাস্ট ইস্পাতকে ওয়েল্ডিং করা যায়। যেমন- • আর্ক ওয়েল্ডিং • গ্যাস ওয়েল্ডিং • ব্রোঞ্জ ওয়েল্ডিং • ব্রেজিংব্যবহার:
রাডার ফ্রেম, জেনারেটর ফ্রেম, স্টীম ভালব প্রভৃতি তৈরির জন্য কাস্ট স্টিল বেশি ব্যবহৃত হয়।
এলয় ইস্পাত (Alloy Steel )
কার্বন ইস্পাতের সাথে অন্য কোন ধাতু মিশালে একে এলয় ইস্পাত (Alloy steel) বা শংকর ইস্পাত বলে। মিশ্র ধাতু হিসাবে ক্রোমিয়াম, নিকেল, ড্যানডিয়াম, মলিবডেনাম, টাংস্টেন কোবাল্ট, কপার, ম্যাংগানিজ, সিলিকন, সালফার প্রভৃতি মিশানো হয়। প্রধানত: ক্ষয়রোধক গুণ, হার্ডেনিং করার গুণ বৃদ্ধি, গ্রেইন সাইজ নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ শক্তি, মেশিনিং করার ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রভৃতি কাজের জন্য বিভিন্ন ধাতু মিশানোর প্রয়োজন হয়। এলয় ইস্পাতের কম্পোজিশন নিম্নরূপ-• কার্বন- ০.২-০.৪%
এছাড়াও প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন হারে নিম্নবর্ণিত উপাদানও যোগ করা হয়ে থাকে।
• ম্যাংগানিজ
• বাকী অংশ লোহা।
• নিকেল
• সিলিকন
• ক্রোমিয়াম
এলয় ইস্পাতের প্রকারভেদ
• লো- এলয় ইস্পাত
• মিডিয়াম এলয় ইস্পাত
• হাই- এলয় ইস্পাত
টুল ইস্পাত
প্লেইন কার্বন ইস্পাত হতে হাই এলয় হাইস্পিড ইস্পাতের মধ্যবর্তী সকল ইস্পাতই টুল ইস্পাতের অন্তর্ভূক্ত। এদের মধ্যে এয়ার হার্ডেনিং ইস্পাত, ওয়াটার হার্ডেনিং ইস্পাত, ওয়েল হার্ডেনিং ইস্পাত, হট ওয়ার্ক ইস্পাত, শক-রেজিস্ট্যান্স ইস্পাত প্রভৃতি প্রধানটুল ইস্পাত ওয়েন্ডিং করার পদ্ধতি
• অক্সি এসিটিলিন ওয়েল্ডিংশিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং
সাবমার্জড আর্ক ওয়েন্ডিং
• এটমিক হাইড্রোজন ওয়েল্ডিং
• ব্রেজিং (সিলভার ব্রেজিং)
• ইনার্ট গ্যাস শিল্ড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং
স্টেইনলেস ইস্পাত
স্টেইনলেস ইস্পাতের প্রধান মিশ্র ধাতু হল ক্রোমিয়াম। এতে অনেক সময় নিকেল ও মিশানো হয়। শতকরা ২০ ভাগ ক্রোমিয়াম মিশ্রিত ইস্পাতে মরিচা ধরে না। সাধারনত ১১.৫% এর বেশি ক্রোমিয়াম মিশালে ইস্পাতকে চকচকে দেখায়। এতে অক্সিজেন সংযোগ হয় না, সহসা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, সাধারণত ঘড়ির চেইন, স্টীলরুল, ক্যালেন্ডার প্রভৃতি তৈরিতে এটা ব্যবহৃত হয়। বায়ুর প্রভাবে এটা কলুষিত হয় না বলে একে স্টেইনলেস ইস্পাত বলা হয়। ১৮/৮ (১৮% ক্রোমিয়াম এবং ৮% নিকেল) এবং ২৫/২০ শ্রেণির স্টেইনলেস ইস্পাত বেশ প্রচলিত।স্টেইনলেস ইস্পাতকে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে ওয়েল্ডিং করা যায়-
• অক্সি এসিটিলিন ওয়েল্ডিং
• রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং
আর্ক ওয়েন্ডিং-
• শীল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং
• ইনার্ট গ্যাস আর্ক ওয়েল্ডিং
সাবমার্জড আর্ক ওয়েল্ডিং
• গ্যাস টাংস্টেন আর্ক ওয়েন্ডিং
প্লাজমা আর্ক ওয়েন্ডিং।
নন-ফেরাস মেটাল (Non Ferrous Metal) :
নন ফেরাস মেটাল বা যে সকল ধাতুতে ফেরাস বা লৌহজ পদার্থ থাকে না তাই অলৌহজ ধাতু। যেমন- তামা, অ্যালুমিনিয়াম, টিন, রূপা, সীসা, দা ইত্যাদি। উৎপাদন তুলনামূলকভাবে সহজ এবং এর ব্যবহারও বেশি। অলৌহজ ধাতু সাধারণত হালকা, নরম, ডাকটাইল ও ম্যালিয়েবল। এই ধরনের গুণাগুণের জন্য অলৌহজ ধাতু নিম্নে কতিপয় নন ফেরাস মেটালের বর্ণনা দেওয়া হলো-তামা (Copper) :
কপার পাইরাইটকে ফার্নেসে গলিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে কয়েকটি বিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তামা প্রস্তুত করা হয়। তামা একটি নরম ও উজ্জল ধাতু। আর্দ্র বাতাসে এর উপর আবরণ পরে। তামা খুব ভাল তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী। এ কারণে রান্নার বাসনকোসন হতে শুরু করে টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও, ডাইনামো ইত্যাদি প্রায় সবরকম বৈদ্যুতিক যন্ত্রে তামা ব্যবহার করা হয়; অর্থাৎ প্রকৌশল ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক। তামার ঘনত্ব ৮৯০০ কিলোগ্রাম / ঘন মিটার, গলনাংক ১০৮০ হতে ১০৮৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং স্ফুটনাংক ২৩০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। ঘনীভূত হওয়ার সময় ধাতুর সংকোচন ক্ষমতা ২.১%। এর কনডাকটিভিটি খুব বেশি সেজন্য ইলেকট্রিক তার তৈরী করতে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। তামার সঙ্গে অন্য উপাদান মিশ্রণে তামার এ্যালয় তৈরি হয়। বস্তুত তামার এ্যালয় তামার চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। তামার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় এ্যালয় হল পিতল ও কাঁসা।নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে কপার ওয়েল্ডিং করা যায়-
• টিগ ওয়েল্ডিং
• মিগ ওয়েল্ডিং
• গ্যাস ওয়েল্ডিং
• ব্রেজিং
• সোল্ডারিং
অ্যালুমিনিয়াম (Aluminium)
অ্যালুমিনিয়াম একটি অলৌহজ ধাতু। অ্যালুমিনিয়াম একটি সাদা উজ্জ্বল ধাতু। এটা খুব নরম ও কম শক্তিশালী ধাতু। অ্যালুমিনিয়ামের বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবহণ এবং ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি। এ্যালুমিনিয়ামের ঘনত্ব ২৭০০ কেজি/ঘন মিটার এবং গলনাংক ৬৫৭ হতে ৬৫৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। সুপ্ততাপ প্রতি গ্রামে ১০০ ক্যালরি। এটা নমনীয় ও অচৌম্বক পদার্থ। তামা ও লোহা এ্যালুমিনিয়ামের চেয়ে ৩ গুণেরও বেশি ভারী। অ্যালুমিনিয়াম খুব ম্যালিয়েবল বলে ছাঁচে ঢালাই করা সহজ হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটা ওজনে হালকা। এর ঘনত্ব ইস্পাতের ঘনত্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। অ্যালুমিনিয়াম খুবই ডাকটাইল ও ম্যালিয়েবল। এর করোসন প্রতিরোধ ক্ষমতা, উচ্চ বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবহণ ক্ষমতা আছে এবং এটি নন-ম্যাগনেটিক। এর মেশিনেবিলিটি বৈশিষ্ট্যের জন্য উৎপাদন কার্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। রান্নার তৈজষপত্র এবং খাদ্য সংরক্ষণের জন্য কৌটা জাতীয় সামগ্রী এই ধাতু দ্বারা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।ব্যবহার :
পাতলা পুরত্ব বিশিষ্ট্য প্যাকিং ম্যাটেরিয়্যাল থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ তৈরি করতে এ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বাস, রিক্সা, মটরগাড়ী, পুল, সিড়ি এবং উৎকৃষ্ট তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী বলে বৈদ্যুতিক তার, রান্নার বাসন কোসন ইত্যাদি প্রস্তুত করতে এ্যালুমিনিয়াম এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে এ্যালুমিনিয়াম ওয়েল্ডিং করা যায় যথা-
• অক্সি এসিটিলিন ওয়েল্ডিং
মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং
• রেজিস্ট্যান্স ওয়েল্ডিং
• সলিড স্টেট ওয়েল্ডিং
মিগ ওয়েল্ডিং
• টিগ ওয়েল্ডিং
• কার্বন আর্ক ওয়েল্ডিং
• এ্যাটোমিক হাইড্রোজেন ওয়েল্ডিং
টিন (Tin) :
টিন একটি খুব উজ্জল ও ক্ষয় প্রতিরোধক ধাতু। টিন সাধারণত অন্য ধাতুর উপরে প্রলেপ বা আবরণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। ক্যান প্রস্তুতের সময় ইস্পাতের কৌটার ভিতরে আবরণ (coating) হিসাবে টিন ব্যবহার করা হয়। সোল্ডার হিসেবেও টিন এর ব্যবহার আছে।
রূপা (Silver) :
রূপা একটি হালকা, খুব নরম ও ম্যালিয়েবল ধাতু। এইরূপ গুণাগুণের জন্য একে ছাঁচে চাপ দিয়ে সহজে কার্যোপযোগী বস্তুতে রূপান্তরিত করা যায়। এ ধাতু দিয়ে অলংকারও তৈরি করা হয়।
সীসা (Lead) :
সীসা একটি নরম ও ডাকটাইল ধাতু কিন্তু ওজনে ভারী। এটা সাধারণত স্টোরেজ ব্যাটারি, জার্নাল বিয়ারিং, ক্যাবলের আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
দস্তা (Zine) :
এটা দেখতে সাদা নীলাভ। স্টিল শিটের উপর আবরণ (Coating) প্রদান করার জন্যই এটা প্রধানত ব্যবহৃত হয়। সাধারণ আবহাওয়ায় এটার ক্ষয় কম হয়। পানির আধার এবং ঢেউ টিনের আবরণ হিসেবে এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়।