শিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW) - Welding Terminology

 শিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW) - Welding Terminology
শিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW) - Welding Terminology

শিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW) - Welding Terminology

শিল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (১াফ, ২এফ, তাফ, ওএফ) Shielded Metal Arc Welding (SMAW)

Shielded Metal Arc Welding
কোনো কিছু তৈরি করতে হলে প্রথমেই ভাবতে হবে জোড়া দেওয়ার কথা, কারণ জোড়া ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায় না। শিল্পক্ষেত্রে যত প্রকারের জোড়া দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে ওয়েল্ডিং তাদের মধ্যে অন্যতম। এমন কোন শিল্প কারখানা নেই যেখানে ধাতুকে স্থায়ীভাবে জোড়া লাগানোর জন্য ওয়েল্ডিং এর ব্যবস্থা নেই। তাই সকল প্রকার নির্মাণ এবং মেরামত কারখানার ওয়েল্ডিং এর উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।

শিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW)

এর মূলনীতি এ প্রক্রিয়ার ইলেকট্রোভ এবং কার্যবস্তুর মধ্যে বৈদ্যুতিক আর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে তাপ সৃষ্টি করে ধাতুকে পূর্ণ গণিত অবস্থায় এনে জোড়া দেয়ার কাজ সম্পাদিত হয়। এক্ষেত্রে ইলেকট্রোড নিজে পলে জোড়ার স্থানে পরিপুরক ধাতু সরবরাহ করে অথবা আলাদা পরিপুরক ধাতু সরবরাহ করা হয়।

ওয়েল্ডিং এর সংজ্ঞা

দুই বা ততোধিক ধাতব বা অধাতব খন্ডকে (এক জাতীর বা কিংবা ভিন্ন জাতীয় ধাতু) তাপ প্রয়োগ করে পূর্ণগণিত অথবা অর্ধগলিত অবস্থায় এনে জোড়া স্থানে পরিপূরক ধাতু যুক্ত করে অথবা না করে চাপ প্রয়োগ করে অথবা বিনা চাপে স্থায়ীভাবে জোড়া দেয়ার পদ্ধতিকে ওয়েল্ডিং বলে।

ওয়েল্ডার এর সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্র

ওয়েল্ডিং পদ্ধতি যেহেতু নির্মাণ ছাড়াও মেরামতির জন্য প্রয়োজনীয়, সেহেতু সকল ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানই একজন ওয়েল্ডারের কর্মক্ষেত্র হতে পারে। তবে স্ব উদ্যোগে কর্মসংস্থানের সুযোগ ওয়েন্ডিং ট্রেড সম্পন্নকারী ছাত্রদের খুব বেশি, কারণ এতে পুঁজি কম লাগে এবং এটি একটি লাভজনক ব্যবসাও বটে। ওয়েল্ডার এর সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্রগুলো

শিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW) - Welding Terminology

ধাতব আসবাবপত্র তৈরি শিল্প

  • মটরগাড়ি তৈরি শিল্প
  • পাট শিল্প
  • স্ট্রাকচারাল শিল্প
  • পাইপ লাইন তৈরির কাজ
  • খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প
  • সাবান এবং প্রসাধনী শিল্প
  • রেলওয়ে তৈরি ও মেরামত শিল্প
  • উড়ো জাহাজ তৈরি শিল্প
  • নভোযান তৈরি শিল্প
  • ঔষধ শিল্প
  • ভারী যন্ত্রপাতি তৈরি শিল্প
  • বস্ত্ৰ শিল্প
  • সার শিল্প
  • ইলেকট্রনিক্স শিল্প, ইত্যাদি।

ওয়েল্ডিং এর কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা Occupational Health and Safety in Welding
প্রথম অধ্যায়-এ কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা Occupational Health and Safety) নিয়ে তথ্য (Information) দেওয়া আছে এছাড়াও শিল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েন্ডিং করতে গেলে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে তা হলো- বিদ্যুৎ, উত্তপ্ত ধাতু, তীব্র আকরশ্মি, ধোঁয়া এবং বিষাক্ত গ্যাস। কারণ, এসব বিপজ্জনক বস্তুর মধ্যে একজন ওয়েল্ডার শিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েন্ডিং করে । সুতরাং উল্লেখিত গুলি দুর্ঘটনার উৎস হিসেবে কাজ করে। শিল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং-এর সময় একজন ওয়েল্ডরের নিরাপদে কাজ করার জন্য নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো স্মরণ রাখা উচিত।

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হবার কারণ
শিল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং এর সময় যেসমস্ত কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারে সেগুলো হলো-
• ইলেকট্রোড হোল্ডারের ইনসুলেশন নষ্ট হলে।
• ওয়েন্ডিং স্থান বা মেঝে খুব ভেজা হলে।
• ওয়েন্ডিং মেশিন আর্থিং করা না থাকলে ।
• সুইচ এর উপরের ইনসুলেশন নষ্ট হলে ।
• ইলেকট্রোডের উপরে ফ্লাক্সের আবরণ নষ্ট থাকলে এবং সেখানে হাত লাগলে।

পুড়ে যাওয়ার কারণসমূহ
আর্ক ওয়েল্ডিং এর সময় নীলভ আলোর মধ্যে ফুলঝুরির মত এক প্রকারঅগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখা যায়; অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুলো গলিত ধাতুর কণিকা ওয়েল্ডিং এর সময় এ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এবং কোন কোন সময় উত্তপ্ত ধাতুখণ্ড ওয়েল্ডারের শরীরের সংস্পর্শে আসে এবং সেই স্থান পুড়ে যায়। এতে জামা কাপড়ও পুড়ে ফুটো হয়ে যায়।

আর্করশ্মি থেকে উদ্ভুত বিপদসমূহ
আর্করশ্মি হতে বিকিরিত আল্ট্রাভায়োলেট (অতি বেগুনী) রশ্মি এবং ইনফ্রারেড (Infrared) রশ্মির প্রভাবে দেহের অনাবৃতস্থানে ফোসকা পড়ে, চামড়া রোদে পোড়ার মত দেখায়। এই রশ্মিসমূহ চোখে লাগলে চোখ খচ্খচ্ করে, চোখ হতে পানি পড়ে, চোখ লাল হয় এবং জ্বালা করে। এটা চোখের স্থায়ী ক্ষতি করতে না পারলেও ২৪ ঘন্টা হতে ৪৮ ঘন্টা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রায় ৭২ ঘন্টা খুব কষ্ট হয়।

শিন্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW) - Welding Terminology

উড়ন্ত চিপস থেকে উদ্ভূত বিপদ
ওয়েল্ডিং শেষে ওয়েল্ডার যখন উত্তপ্ত ধাতুমলগুলো চিপিং হ্যামারের সাহায্যে ওয়েল্ড এর উপর হতে পরিষ্কার করে, তখন উক্ত গরম চিপস্ বা ধাতুমল অনেক সময় ওয়েল্ডার এর চোখে পড়ে বিপদ ঘটায়। চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল স্থান উত্তপ্ত ধাতুমল বা পিস্ চোখে পড়লে বেশি কষ্ট হয় চোখ ছাড়া দেহের কোন অনাবৃত স্থানে উক্ত গরম চিপস লাগলেও বেশ কষ্ট হয় ওয়েল্ডিং করা স্থান গ্রাইন্ডিং করার সময় ও উত্তপ্ত চিপস চোখে পড়ে অসুবিধা করতে পারে ।

ধোয়া থেকে উদ্ভূত বিপদসমূহ
ওয়েল্ডিং এর সময় ইলেকট্রোডের আবরণ এবং ধাতুমল পুড়েবে গ্যাস বা ধোঁয়ায় সৃষ্টি করে, তা বন্ধস্থানে হলে ওয়েন্ডার এর জন্য খুবই অসুবিধার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে দত্তার প্রলেপযুক্ত ধাতু বা গ্যালভানাইজড ধাতু ওয়েন্ডিং এর সময় জিংক এর বাপ উক্ত ধোঁয়ার সাথে যুক্ত হয়, যা শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ধোঁয়াটে পরিবেশে কিছুক্ষণ কাজ করলে একজন ওরেন্ডার অতি তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হরে পড়ে, তাছাড়া মাথা ব্যথা, চক্ষু জ্বালা করা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

ওয়েল্ডিং এর নিরাপত্তা
শিল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং এর নিরাপত্তাবিধিকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা-
১) ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (Personal safety)
২) বস্ত্ৰপাতিৰ নিৰাপত্তা (Safety for Equipment)
৩) কর্মস্থল পরিকল্প পরিচা (House keeping)

ওয়েল্ডারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা

ওব্লেন্ডারের নিরাপত্তার জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরিধান করতে হয়। ওয়েল্ডারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাজনিত সাতজনের গ্রাম বলতে এমন কতকগুলো সাজসরঞ্জামকে বুঝায় যেগুলা ব্যবহার করলে একজন ওয়েল্ডার ব্যক্তিগতভাবে নিরাপদ থাকে।

হেলমেট (Helmet)
এটাকে মাথায় আটকে নিয়ে সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার করা যায় হ্যান্ডলীন্ডের মত হেলমেটও ওয়েল্ডার এর চোখ এবং মুখমণ্ডলকে ক্ষতিকারক আর্ক রশ্মি হতে রক্ষা করে।

হ্যান্ড শিশু (Hand Shield)
এটা ওয়েল্ডিং এর সময় ওয়েল্ডারের চোখ এবং মুখমণ্ডলকে ক্ষতিকারক আর্করশ্মির প্রভাব হতে বাঁচায় এটাকে এক হাতে ধরে কাজ করতে হয়।

হ্যাঙ্ক গ্লোভস (Hand Gloves)
এটা পুরু এবং অগ্নি প্রতিরোধক পদার্থ দিয়ে তৈরি হাতের তালু এবং আঙ্গুলগুলিকে অগ্নি এবং উত্তপ্ত ধাতু হতে রক্ষা করে। ওয়েল্ডিংয়ের জন্য সাধারণত চামড়ার তৈরি
হ্যান্ড গ্রোভস ব্যবহৃত।

ওয়েডিং গগন (Welding Goggles)
গ্যাস ওরেল্ডিং এবং কাটিং কাজের সময় তীব্র রশ্মি হতে চোখকে রক্ষাকরতে এটি ব্যবহৃত হয়।

সেফটি গগলস্ (Safety Goggles)
চিপিং করে জোড়াস্থান তৈরির কাজ করার সময় উৎক্ষিপ্ত চিপস হতে এটা চোখকে রক্ষা করে।

লেদার জ্যাকেট (Leather Jacket)
এটা চামড়ার তৈরি জ্যাকেট যা ওয়েল্ডিং এর সময় উৎপন্ন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এবং উত্তাপ হতে ওয়েল্ডারকে রক্ষা করে।

সেফটি সুজ (Safety Shoes)
এটি এক ধরনের চামড়ার তৈরি ঘৃতা; যার তলা রাবারের তৈরি। বৈদ্যুতিক শক হতে রক্ষা পাওয়া এবং ধারালো বস্তু বা উচ্চস্থান হতে পতিত কোন বন্ধ হতে পা কে রক্ষা করার জন্য এ ধরনের সু বা জুতা ব্যবহার করা হয় ।

রেস্পিরেটর (Respirator)
এটা এমন এক ধরনের যন্ত্র যার সাহায্যে ওয়েভার প্রতিকুল স্থানেও বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে কাজ চালাতে পারে। বন্ধ কোন স্থানে বা কোন ক্ষতিকারক গ্যাস সৃষ্টিকারী ধাতু ওয়েল্ডিং এর সময় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ওরেস্তারের যখন কষ্ট হয় তখন রেস্পিরেটর ব্যবহার করা হয়।

স্কাল ক্যাপ (Skull Cap)
এটা চামড়ার তৈরি বিশেষ ধরনের টুপি, যা ওয়েফ্ফার এর মাথাকে উত্তাপ এবং অগ্নিস্থলঙ্গি হতে রক্ষা করে। ওভারহেড পজিশনে ওয়েন্ডিং এর সময় এর বিশেষ প্রয়োজন হয়।

চামড়ার এপরুন (Leather Apron)
এটা চামড়ার তৈরি, যা দেহের সামনের অংশকে আবৃত রাখে। ফলে ওয়েল্ডারের জামা কাপড়, উড়ন্ত চিপস অগ্নিকুলঙ্গি হতে রক্ষা পায়। এছাড়া এটা ময়লা ধুলাবালি, বা কাশি হতে জামা কাপড়কেও রক্ষা করে।

২. যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা (Safety for Equipment)
যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা বলতে বুঝায় যে সকল মেশিন, মেজারিং টুলস ও ইকুইপমেন্ট দ্বারা একজন ওয়েল্ডার কাজ করে সে সকল মেশিন, মেজারিং টুলস ও ইকুইপমেন্ট ঠিকমত বা বুটিমুক্ত আছে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি দিয়ে একজন ওয়েল্ডার শিল্পকারখানার কাজ করেন। ভিন্ন ভিন্ন মেশিন বা যন্ত্রপাতির ভিন্ন ভিন্ন যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিধি মেনে চলতে হয়। কোন মেশিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রুটি লক্ষ্য করলে সুপারভাইজার বা ফোরম্যান অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে এবং সম্ভাব্য কম সময়ের মধ্যে সেটি ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। একজন কর্মীর মেজারিং টুলস ও ইকুইপমেন্ট কর্মক্ষম আছে কি না সে বিষয়ের উপর সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখা প্রয়োজন। মেশিন, মেজারিং টুলস ও ইকুইপমেন্ট এর অনুমোদিত ব্যবহার বিধি মানতে হবে।

৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ( House keeping)
কর্মস্থলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে অনেক সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। তাই কর্মস্থল পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য নিচের বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ নজর দেবো।
• চলাচলের রাস্তা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হতে মুক্ত রাখতে হবে যাতে কেউ হোঁচট না খায়।
• কর্মস্থলের মেঝে তৈল, গ্রীজ মুক্ত রাখতে হবে; পিচ্ছিল মেঝে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
• ধাতুর লম্বা টুকরার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে, যেন কেউ আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।
• টুলস ও যন্ত্রপাতি কাজ শেষে পরিষ্কার করে যথাযথ ভাবে স্টোরে সংরক্ষণ করতে হবে।

ওয়েল্ডিং পদ্ধতির পরিচিতি (Introduction to welding practice )

ওয়েল্ডিং এর পদ্ধতি:
গ্রীল তৈরির দোকানে হরেক রকমের গ্রীল তৈরি হয়, সেখানে একাধিক ধাতুখণ্ডকে জোড়া লাগনো হয়। আষায় কামারশালায় মাতৃখণ্ডকে উত্তপ্ত করে অর্ধগলিত অবস্থায় এনে বাড়ির সাহায্যে পিটিউভয়ক্ষেত্রে জোড়া হয় স্থায়ী, তবে গ্রীন তৈরির দোকানে জোড়া লাগানোর জন্য জোড়াস্থানে চাপ প্রয়োগ করতে হয় না, কিন্তু কামারশালায় শিকল বানাতে জোড়াস্থানে হাতুড়ির আঘাত বা চাপ প্রয়োগ করতে হয়। আমরা এরুপ জোড়া দেওয়াকে ওয়েভিং করা বলি। অর্থাৎ দুখভ ধাতুকে উত্তাপের সাহায্যে গণিত বা অর্ধগলিত অবস্থায় এনে, চাপে অথবা বিনাচাপে স্থায়ীভাবে জোড়া দেওয়া।

বহুল প্রচলিত ভরেন্ডিং পদ্ধতি -
• ফোর্স ওয়েল্ডিং
• গ্যাস ওয়েল্ডিং পারমিট ওয়েল্ডিং

ওয়েল্ডিং-এর শ্রেণিবিন্যাস
বহুল প্রচলিত ওয়েন্ডিং পদ্ধতির শ্রেণিবিন্যাস নিচে উল্লেখ করা হলো- ওয়েল্ডিং প্রধানত দু'প্রকার। যথা-
১. প্রেসার ওয়েন্ডিং বা ননফিউশন ওয়েন্ডিং (Pressure Welding or Nonfusion Welding)
২, নন প্রেসার ওয়েল্ডিং বা ফিউশন ওয়েল্ডিং (Nonpressure Welding or Fusion Welding)

উপরের প্রধান শ্রেণি দুটিকে আবার বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
১. প্রেসার ওয়েল্ডিং বা ননফিউশন ওয়েল্ডিং
(ক) ফোর্ড ওয়েন্ডিং (Forge Welding)
• হ্যামার ওয়েল্ডিং (Harniner Welding)
• ডাই ওয়েল্ডিং (Die Welding)
• রোল ওয়েল্ডিং (Roll Welding)

(খ) ইলেকট্রিক রেজিস্ট্যান্স ওয়েন্ডিং
• ৰাট ওয়েল্ডিং (Butt Welding)
• সিম ওয়েল্ডিং (Scam Welding)
• স্পট ওয়েল্ডিং (Spot Welding)
• প্রজেকশন ওয়েল্ডিং (Projection Welding)
• পারকাশন ওয়েল্ডিং (Percussion Welding)
• ফ্লাশ ওয়েল্ডিং (Flush Welding)

(গ) আর্ক ওয়েল্ডিং (Are Welding)
শিল্ডেড মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং (SMAW)

২. নন প্রেসার ওয়েন্ডিং বা ফিউশন ওয়েল্ডিং
• টিগ ওয়েল্ডিং (TIG / GTAW)
মিগ ওয়েল্ডিং (MIG/GMAW)

(ঘ) গ্যাস ওয়েল্ডিং (Gas Welding)

  • অক্সি অ্যাসিটিলিন ওয়েল্ডিং (Oxy Acetylene Welding)
  • অক্সি হাইড্রোজেন ওয়েল্ডিং (Oxy Hydrogen Welding)
  • এয়ার অ্যাসিটিলিন ওয়েল্ডিং (Air Acetylene Welding)

(ঙ) থারমিট ওয়েল্ডিং (Thermit Welding)
বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে নতুন নুতন ওয়েল্ডিং পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, ফলে ওয়েল্ডিং এর শ্রেণিবিভাগ অনেক জটিল হয়েছে। আমেরিকান ওয়েল্ডিং সোসাইটি নামের একটি সংস্থা ওয়েল্ডিং এর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার একটি মাস্টার চার্ট তৈরি করেছে। উক্ত চাটটি নিম্নরূপ-

ওয়েন্ডিং পরিভাষা (Welding Terminology)

ওয়েল্ডিং এর কাজ শিখতে এসে একজন শিক্ষানবিস বা নবীন ওয়েল্ডারকে কতিপয় শব্দ বার বার শুনতে হয়। উক্ত শব্দগুলির পরিভাষা জানা এবং বুঝতে পারা তার জন্য অতি প্রয়োজন। এ দিক বিবেচনা করে নিচে কতিপয় বহুল প্রচলিত ওয়েন্ডিং পরিভাষা সম্পর্কে দেওয়া হলো-

ওয়েল্ডিং পরিভাষাসমূহ (Base Metal)

যে ধাতুকে ওয়েল্ডিং করা হচ্ছে তাকে বেস মেটাল বা প্যারেন্ট মেটাল বলে।

ফিলার মেটাল (Filler Metal)
পরিপূরক ধাতু হিসেবে ওয়েল্ডিং এর সময় জোড়া স্থানে এটা প্রয়োগ করা হয়।

রান (Run)
ইলেকট্রোড বা ব্লোপাইপকে একবার মূলধাতুর উপর দিয়ে টেনে নেয়ার পর, বেসমেটালের উপর যে ধাতু জমা হয় তাকে রান বলে। একে অনেক সময় বিডও বলা হয়।

রুট (Route)
ওয়েল্ডিং করার জন্য প্রস্তুতকৃত ধাতু খণ্ডদ্বয়ের মুখোমুখি মিলন স্থলকে রুট বলে।

ফিলেট ওয়েল্ড (Fillet Weld)
ত্রিকোণাকৃতি প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট ওয়েল্ডিংকে ফিলেট বলে।

লেগলেংথ (Leg Length)
ফিলেটের রুট হতে টো পর্যন্ত দূরত্ব।

প্রোট থিকনেস (Throat Thickness)
রুট হতে 'টো’দ্বয়ের মধ্যবর্তী বিন্দুদ্বয়ের লম্ব দূরত্ব।

ট্যাক ওয়েল্ড (Tack Weld)
যে ধাতব খন্ড দুটির উপর ওয়েল্ডিং করা হবে সে খন্ড দুটি যেন তাপের প্রভাবে বা অন্য কোনো বস্তুর ধাক্কা লেগে সরে যেতে বা বাঁকা হতে না পারে সেজন্য পাত দুটিতে ছোট ছোট রানের ওয়েল্ডিং করা হয় তাকে ট্যাক ওয়েন্ডিং বলে।

আর্ক (Arc) :
ইলেকট্রোড এবং জবের কারেন্ট বাহিত ধাতব বাষ্পের একটি স্রোত।
লং আর্ক (Long Arc):
আর্ক এর দৈর্ঘ্য বেশি হলে তাকে লং আর্ক বলে।
শর্ট আর্ক (Short Arc) :
যে আর্কের দৈর্ঘ্য কম তাকে শর্ট আর্ক বলে, এটি সাধারণত ইলেকট্রোডের কোরের ব্যাসের সমান হয়।

হিট অ্যাফেকটেড জোন (Heat Affected Zone)
ওয়েল্ডিং বা কাটিং কাজের সময় তাপের প্রভাবে জবের যে অংশটুকু ধাতুর ভিতরের গঠনের পরিবর্তন হয় তাকে হিট অ্যাফেকটেড জোন বলে

ফিউশন জোন (Fusion Zone)
মূল ধাতুর যে অংশটুকু উত্তাপের প্রভাবে গলে ওয়েল্ড মেটালের সাথে মিশে যায় সে অংশটুকুকে ফিউশন জোন বলে

ফ্লাক্স (Flux)
এটা এক প্রকার রাসায়নিক যৌগিক পদার্থ যা ওয়েল্ডিং, সোল্ডারিং বা ব্রেজিং এর সময় প্রয়োগ করা হয়। এটা জোড়াস্থানে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে ক্রিয়া করে অক্সাইড তৈরিতে বাধা দেয় ও জোড়াকে শক্ত করে দ্রুত গলন কাজ সমাধা করে ।

প্রিহিটিং (Preheating) :
ওয়েল্ডিং করার পূর্বে মূল ধাতুকে তাপ প্রয়োগ করাকে প্রিহিটিং বলে।
পোষ্ট হিটিং (Post Heating) :
ওয়েল্ডিং করার পর জবে তাপ প্রয়োগ করাকে পোষ্ট হিটিং বলে।

ওয়েল্ডিং এর ক্ষেত্রে সম্পর্কযুক্ত কতকগুলো বৈদ্যুতিক সংজ্ঞা
ভোল্টেজ (Voltage):
নলের মধ্য পানি প্রবাহিত করতে যেমন চাপের প্রয়োজন, অনুরূপভাবে পরিবাহির মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত করতে চাপের প্রয়োজন হয়; এ চাপকে ভোল্টেজ বলে। ভোল্টেজ এর একক ভোল্ট (Volt).

রেজিষ্ট্যান্স (Resistance):
কোন পদার্থের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় উক্ত পদার্থ যে বাধা প্রদান করে তাকে ঐ পদার্থের রেজিস্ট্যান্স বলে। রেজিস্ট্যান্স এর একক ওহম (Ohm ).

অলটারনেটিং কারেন্ট (AC):
যে বিদ্যুৎ প্রতি মুহুর্তে দিক পরিবর্তন করে তাকে অলটারনেটিং কারেন্ট (সংক্ষেপে এসি) বলে।

ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডিসি):
যে বিদ্যু প্রবাহের সময় দিক পরিবর্তন করে না তাকে একমুখী প্রবাহ বা ইংরেজিতে ডাইরেক্ট কারেন্ট বলে (সংক্ষেপে ডিসি বলে)।

ইলেকট্রিক পাওয়ার:
কোন সার্কিটে বলের সাহায্যে একক সময়ে যে কাজ হয় তাকে ইলেকট্রিক পাওয়ার বলে। এর একক ওয়াট (Watt)। এক ওয়াটকে এক হাজার গুণ করলে তাকে কিলোওয়াট বলে।
অর্থাৎ ১ ওয়াট x ১০০০ = ১ কিলোওয়াট। সার্কিট (Circuit): ইলেকট্রিসিটি চলার পথকে বাংলায় বর্তনী এবং ইংরেজিতে সার্কিট বলে।

পোলারিটি (Polarity):
কোন সার্কিটে ইলেকট্রন কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে তা নির্দেশ করাকে পোলারিটি বলে। উল্লেখ্য যেহেতু ডিসি একমুখী সুতরাং এর পোলারিটি আছে কিন্তু এসি প্রতি মুহুর্তে দিক পরিবর্তন করে তাই এর কোন পোলারিটি নেই। ওয়েল্ডিং ক্ষেত্রে এ পোলারিটির গুরুত্ব অপরিসীম ।

পোলারিটির শ্রেণিবিন্যাস
পোলারিটি দুই প্রকার। যথা-
ক. স্ট্রেইট পোলারিটি (Straight Polarity)
খ. রিভার্স পোলারিটি (Reverse Polarity)

Straight Polarity
স্ট্রেইট পোলারিটি। যখন ইলেকট্রোড ঋণাত্মক প্রান্তে এবং জব ধনাত্মক প্রান্তে থাকে তখন সে ব্যবস্থাকে স্ট্রেইট পোলারিটি বলে।

রিভার্স পোলারিটি:
রিভার্স অর্থ উল্টা, সুতরাং এবার পূর্বের সংযোগ উল্টা করে করতে হবে। অর্থাৎ ইলেকট্রোডযুক্ত হবে ধনাত্মক প্রাপ্তে এবং জবযুক্ত ঋণাত্মক প্রান্তে তাহলে এ ব্যবস্থাকে বলা হবে রিভার্স পোলারিটি।

পোলারিটির বর্ণনা
টেট্রইট পোলারিটির

ইলেকট্রোড হোল্ডার যখন নিগেটিভ (-ve) মেরুতে সংযুক্ত হয় তা স্ট্রেইট পোলারিটি। এতে ইলেকট্রোড হতে প্লেটের দিকে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়। ফলে মোট তাপের ৬৬.৬৬% সৃষ্টি হয় প্লেটে এবং বাকি ৩৩.৩৩% সৃষ্টি হয় ইলেকট্রোডে। স্ট্রেইট পোলারিটি ভারী বা মোটা জব ওয়েল্ডিং করতে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে সরু ব্যাস বিশিষ্ট পাতলা আবরণযুক্ত বা নগ্ন ইলেট্রোড ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রোডে কম তাপ উৎপন্ন হওয়ায় উক্ত ইলেকট্রোড অতিরিক্ত পোড়া হতে রক্ষা পায়।

রিভার্স পোলারিটির ব্যবহার
ইলেকট্রোড হোল্ডার যখন পজিটিভ (- Ve) মেরুতে সংযুক্ত হয় তখন তা রিভার্স পোলারিটি। এ ক্ষেত্রে প্লেট হতে ইলেকট্রোডের দিকে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়। ফলে ইলেট্রোডে ৬৬.৬৬% এবং প্লেটে ৩৩.৩৩% তাপ উৎপন্ন হয়ে ইলেকট্রোডের প্রান্তে ধাতু গলে পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। সুতরাং পাতলা বা চিকন জব ওয়েল্ডিং করার কাজে এ পোলারিটি ব্যবহৃত হয়।

আর্ক ওয়েন্ডিং মেশিন
ওয়েল্ডিং এর কাজে এসি (Alternating Current) অথবা ডিসি (Direct Current) এ উভয় প্রকারের কারেন্ট ব্যবহৃত হয়। এজন্য ওয়েল্ডিং মেশিন কে প্রধানত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা-
১. এসি ওয়েন্ডিং মেশিন
২. ডিসি ওয়েল্ডিং মেশিন

এসি ওয়েল্ডিং মেশিনের কার্যনীতি এসি ওয়েল্ডিং
মেশিনটি আসলে একটি ট্রান্সফরমার (Transformer)। ট্রান্সফরমার এমন একটি যন্ত্র যা ভোল্টেজকে কম বা বেশি করতে পারে। যে শ্রেণির ট্রান্সফরমার ভোল্টেজকে বেশি করে তাকে স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার বলে, আবার যে শ্রেণির ট্রান্সফরমার ভোল্টেজ কমায় তাকে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার বলে।

ওয়েন্ডিং করার কাজে কম ভোন্ডেজ এবং বেশি কারেন্ট দরকার, তাই ওয়েল্ডিং কাজে যে ট্রান্সফরমারগুলো ব্যবহৃত হয় এর সবগুলো স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার। ট্রান্সফরমারে দুই প্রকারের কোর থাকে, যথা- প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি। প্রাইমারি কোরে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়, আর সেকেন্ডারি কোর হতে ওয়েন্ডিং এর জন্য বিদ্যুৎ নেওয়া হয়। মেশিনের কারেন্ট কন্ট্রোল ডিভাইস ব্যবহার করে কারেন্ট ও ভো ট্রান্সফরমারের কোরকে বায়ু অথবা তেলে ঠান্ডা করা হয়।

শিন্ডের মেটাল আর্ক ওয়েল্ডিং
ওয়েন্ডিং ট্রান্সফরমার ওপেন সার্কিট ভোগেজ ৭০ হতে ১০০ ভোল্ট এবং কারেন্ট ১৫০ হতে ১০০ এম্পিয়ার সরবরাহ করতে পারে। যেখানে বিদ্যুৎ সরকার আছে সেখানে এটি ব্যবহার করা যায়। শুধু ফ্লাক্স কোর্টেও ইলেকট্রোড এ মেশিনে ব্যবহার করতে

ডিসি জেনারেটরের কার্যনীতি
এ ধরনের ভরেন্ডিং সেট একজন ওরেডার এর কাজের জন্য বেশি উপযোগী। একটি বৈদ্যুতিক মটর একই শ্যাফটে জেনারেটর এর আর্মেচারের সাথে যুক্ত থাকে। বৈদ্যুতিক মটরটিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে মুরান হয় এবং একই শ্যাফটে থাকার কারণে জেনারেটর এর আর্মেচার ঘোরে। ফলে তড়িৎ চালক বল উৎপন্ন হয়। উক্ত তড়িৎ চালক বল কে কুমুটেটর নামক যন্ত্রাংশের মাধ্যমে ডিসি ৰা একমুখী কারেন্টে পরিণত করা হয়। (কমুটেটর বল অর্থ বৃত্তাকার ধাতব চাকতি)। এ শ্রেণির মেশিনে ওপেন সার্কিট ভোগেজ ৪০ হতে ৬০ ভোগী এবং কারেন্ট ১৫০ হতে ১০০ অ্যাম্পিয়ার পর্যন্ত পাওয়া যায়। যে স্থানে বৈদ্যুতিক শক্তির সরবরাহ নেই সেখানে ইঞ্জিন চালিত জেনারেটর সেট ব্যবহৃত হয়।
বৈদ্যুতিক মটর অথবা ইঞ্জিনের সাহায্যে একে চালান যায় বলে যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই সেখানে এ মেশিন ব্যবহার করা যায়। পোলারিটি ঠিক রেখে সব ধরনের ইলেকট্রোড এ মেশিনে ব্যবহার করা যায়।

রেক্টিফায়ার টাইপ ভিসি ওয়েল্ডিং মেশিনের কার্যনীতি
রেক্টিফায়ারের কাজ হল ট্রান্সফরমার হতে এসি কে কাজের জন্য সরবরাহ করার পূর্বে ডিসি তে পরিবর্তিত করা। রেক্টিফায়ার আলাদা ইউনিট হিসাবে ট্রান্সফরমারের সাথে যুক্ত থাকে, কখনও কখনও তা একই মেশিন কেসের মধ্যে থাকে, রেক্টিফায়ার যুক্ত ওয়েন্ডিং মেশিনকে এসি/ডিসি ওয়েন্ডিং (AC/DC Welding Machine) বলে।

পোলারিটি ঠিক রেখে সুবিধাজনকভাবে ওয়েল্ডিং করতে হলে এ মেশিন ব্যবহার করতে হয়। সব ধরনের ইলেকট্রোড ব্যবহার করে এ মেশিনে ওয়েল্ডিং করা যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url